ভাষা আন্দোলনের মাস শুরুহলো। আজ ১ ফেব্রুয়ারি।বছর ঘুরে আবারও ফিরে এলোরক্তস্নাত এই মাস। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল স্মৃতিমাখা এ মাস এলেই বিদ্যুৎ চমকের মতো বাঙালি হৃদয়ে ভেসে ওঠে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর—এসব ভাষা শহীদদের নাম। সাতচল্লিশে দেশভাগের পরেই যখন বাঙালিরভাষার ওপর আঘাত এলো, তখন বুকের রক্ত ঢেলে লেখা হলো এক নতুন ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের সেই লড়াই থেকে সঞ্চিত শক্তিই পরবর্তীকালে যুগিয়েছে গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা।ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে গৌরবোজ্জ্বল। পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালি ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিল। রক্ত ঝরানো সেই দিন এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও স্বীকৃত।
বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে,জাতির স্বকীয়তা, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে ভাষা আন্দোলনসব সময় আলোকবর্তিকার মতো মূর্ত হয়ে ওঠে। এখনো জাতির যে কোনো ক্রান্তিকালে ভাষা আন্দোলন আমাদের প্রেরণা হয়ে দেখা দেয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। ভাষা আন্দোলন তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক।
উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’ পাকিস্তান সরকারের এমন ঘোষণার প্রেক্ষাপটে ১৯৫২ সালে শুরু হয় বিক্ষোভ। তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ছাত্ররা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সাধারণ জনতাও এমন সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি। তৈরি বিরূপ প্রতিক্রিয়া। বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যেকামায় রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশি জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। সেই পথ ধরে শুরু হয় স্বাধিকার আন্দোলন ও একাত্তরে নয় মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ভাষার জন্য বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়। ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘোষণা করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিদের রক্ত দান মর্যাদায় পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের। দেশে দেশে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় দিনটি।
ঢাকা,শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।