দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে থেকেও অফিস সহায়ক পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন মেহেদী হাসান। তার হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর ও হয়ে যাচ্ছে।
তার আপন বড় বোন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হওয়ায় এ অদ্ভুদ ঘটনাটি ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক তোলপার শুরু হয়।
জানা গেছে, মাগুড়া ইউনিয়নের মাগুড়া দোলাপাড়া গ্রামে গত ২০০০ সালে মাগুড়া দোলাপাড়া আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ২২ বছর পর গত ২০২৩ সালে এমপিওভুক্ত করা হয়। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছাঃ তানজিনা আক্তার লাইজু ও
তার স্বামী বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি শাহ আলম প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নতুন করে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেন। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী বেনবেইজ টিচার ডাটাবেজ অনুযায়ী যে সকল শিক্ষক ও কর্মচারীর নাম কমপক্ষে তিনটি সালের ডাটাবেজে সংরক্ষন থাকবে শুধুমাত্র তারাই এমপিওভুক্তির আওতায় আসবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকার স্বামী শাহ আলম কর্মরত শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো বেনবেজ টিচার ডাটাবেজে নাম সংরক্ষন করেন।
বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছে ১১ জন, কর্মচারী ৬ জন। কিন্তু ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ৪ জন শিক্ষক এমপিও হলেও কর্মচারী ৬ জনই এমপিও ভুক্তির তালিকায় অন্তরর্ভুক্ত হয়েছেন।
ওই বিদ্যালয়ের নন এমপিওভুক্ত একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যালয় এমপিও হলেও সাবেক সভাপতি প্রধান শিক্ষিকার স্বামী শাহ আলম আমাদের কাছে ১০ লাখ করে টাকা দাবি করে বসে। আমরা তার
দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় তিনি আমাদের বেনবেজ শিক্ষক ডাটাবেজে পর পর তিনবার নাম না উঠানোর কারনে আমাদের আমাদের এমপিও ভুক্ত হয়নি। শুনেছি তিনি আমাদের বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষক নিয়োগ করে রেখেছেন।
এদিকে খোজ নিয়ে আরো জানা গেছে, যে ৬ জন কর্মচারী এমপিওভুক্ত হয়েছেন তার মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষিকার আপন ভাই মেহেদী হাসান। তাকে ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে গত ২০২৩ সালের ৯ই নভেম্বর যোগদান দেখানো হয়। তার এমপিও হয় ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে
অবস্থান করলেও বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর করে চলেছেন। অপর দিকে ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকা মিলে মাহাবুল ইসলাম নামে একজনের কাছে ফাকা চেকে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে নিরাপত্তা কর্মী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই নিরাপত্তা কর্মীও এমপিও হওয়ার পর সাবেক
সভাপতি তার কাছে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করেন। ওই নিরাপত্তা কমী সভাপতির দাবিকৃত ৪ লক্ষ টাকা দিতে অস্বীকার করায় তিনি নিরাপত্তা কর্মীকে মামলার ভয় দেখান। নিরাপত্তা কর্মী কোন উপায়ন্তর না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রধান শিক্ষিকা ও সাবেক সভাপতির নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের
করেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা তানজিনা আক্তার লাইজুর সাথে কথা বললে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে আপনারা আমার স্বামী ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি শাহ আলমের সাথে কথা বলেন। প্রধান শিক্ষিকার কাছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীর উপস্থিতির হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, খাতা ভুল করে বাড়িতে রেখে এসেছি।
বিদ্যালয়টির সাবেক সভাপতি শাহ আলমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা সিন্ডিকেট করে অপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন ভাই আমি মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের রুমে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছি। আপনারা আসেন বিষয়টি মিটিয়ে ফেলি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের বিষয়ে অনেক অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইননানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী মাহাবুল ইসলাম চেক সংক্রান্ত একটি বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটির শুনানীর জন্য প্রধান শিক্ষককে ডেকে পাঠিয়েছি। প্রবাসী মেহেদী হাসান প্রবাসে থেকেও ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসে থেকে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে থাকার কোন বিধান নেই। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
কর্মরত শিক্ষকদের কাছে বিল প্রস্তুতের জন্য টাকা দাবি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি।
মোঃ শাহজাহান সিরাজ,কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)সংবাদদাতাঃ
কিশোরগঞ্জ,মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।