বিচার চলাকালীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। একইসঙ্গে বিচারকালীন আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সকল সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা চায় সংগঠনটি।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত ৮টায় রাজধানীর রূপায়ণ টাওয়ারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এই কথা জানান।
লিখিত বক্তব্যে নাহিদ বলেন, আওয়ামী মতাদর্শ, দল এবং মার্কার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ ৩৬ জুলাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ফলে দল ও মতাদর্শ হিসেবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে রাজনীতি করার সকল অধিকার হারিয়েছে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের সকল সহযোগী ব্যক্তি ও সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। এনসিপি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষিতব্য জুলাই সনদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল ও পক্ষকে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানায়।
তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি অবিলম্বে জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখতে চায়। এসময় তিনি সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য- ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই’-এমন বক্তব্যের নিন্দা জানান।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংঘটিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, আগ্রাসনবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, গুম-ক্রসফায়ার, ভোট ডাকাতিসহ জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নে কার্যকর অগ্রগতি দৃশ্যমান হওয়ার আগে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত।
নাহিদ জানান, বিচারিক কার্যক্রমের পরিণতি দৃশ্যমান হতে হবে। আত্মপ্রকাশের পর থেকে আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি- আওয়ামী লীগের কৃত অপরাধের বিচার, দায় স্বীকার, অনুশোচনা, পাপমোচন ব্যতীত আওয়ামী লীগের দল হিসেবে ক্রিয়াশীল থাকার পক্ষে যেকোনো ধরনের তৎপরতা ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের শামিল।
তিনি আরও বলেন, এনসিপি জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ফ্যাসিবাদী রেজিমে সংঘটিত অপরাপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নিশ্চয়তা চায়। বিচার চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং এই মাফিয়াগোষ্ঠীর রাজনীতিতে ফেরার যেকোনো প্রচেষ্টাকে এনসিপি প্রতিহত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।
তরুণ এ রাজনীতিক বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক দল নয়; বরং এটি একটি ফ্যাসিবাদী দল। নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পরাজয় ঘটেনি। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী রেজিম বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে। ফলত, আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে গণতান্ত্রিক ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে অবস্থান করছে। বিচার অনিষ্পন্ন রেখে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ার যেকোনো ধরনের আলোচনা ও প্রস্তাব এনসিপি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, একাত্তরে সংগঠিত গণহত্যার বিচার নিয়ে এখনো প্রশ্ন আসছে। এটা আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের দায়। একাত্তরের গণহত্যার পরে সে বিচার আমরা নিষ্পন্ন করতে পারিনি। সেটির যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তাই আমরা আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়ে কঠোর এবং নিষ্পন্ন দেখতে চাই।
তিনি বলেন, একাত্তর থেকে সকল গণহত্যার বিচার আমরা চাই। তবে রাজনৈতিকভাবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে কনসার্নের জায়গা আওয়ামী লীগের বিচার। তাদের নিবন্ধন বাতিল এবং তাদেরকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সরকার ও ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হওয়ার আহ্বান জানাই।
সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন বা রাজনৈতিক দল কার্যক্রম করতে পারবে কী পারবে না-এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল সরকার, বিদ্যমান রাজনৈতিক দল ও জনগণের রয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের এই বিষয়ে মন্তব্য, পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত-প্রস্তাবনা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এই ধরনের চেষ্টা যেন বাংলাদেশে না হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিকভাবেই হবে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত একটি সময়সীমা দিয়েছেন। আমরা সেটিকে সমর্থন করছি। এই সময়ের মধ্যেই বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচনের কাজ করা সম্ভব। এই ধাপগুলো শেষ করে আমরা তারপরে নির্বাচনে যাব।
ঢাকা,শুক্রবার ২১ মার্চ এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।