নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৫ টি মাদ্রাসায় ভুয়া ও জাল সনদে ১৭ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জাল ও ভুয়া সনদধারী এসব শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। সম্প্রতি ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখিয়ে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে এমপিওভুক্তির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আব্দুল হাই নামে এক শিক্ষকের বিল বন্ধ করা হয়। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সরকারের সহযোগিতায় এসব কর্মকান্ড ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি উচ্চতর তদন্তের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসার জাকির হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক।
জানা গেছে, গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ সালে তৎকালিন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এটিএম নুরুল আমিন শাহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় নিয়োগকৃত শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও ফাইল সম্পর্কিত তথ্য যাচাই বাছাই করে জানতে পারেন কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৫টি মাদ্রাসায় শিক্ষক কর্মচারী পদে যে সকল নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে ওই সকল নিয়োগ সরকারী বিধি মেনে হয়নি। এমনকি শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়োগে যে সনদ ব্যাবহার করা হয়েছে সেগুলো জাল ও ভুয়া। বিষয়টি তিনি (উমাশিঅ/কিশোর/নীল/১৯৬/২০২৪ ইং একই তারিখ বহাল রেখে জাল এবং ভুয়া নতুন এমপিও ফাইল সম্প্রর্কিত তথ্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিশোরগঞ্জ ও মহাপরিচালক মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সহ উদ্ধর্তন কর্তপক্ষের নিকট প্রেরন করেন। এর কিছুদিন পর তৎকালিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদলী হলে বর্তমান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সরকার ওই ফাইল গোপন করে ও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী হককে ভুল বুঝিয়ে ওই সকল জাল সনদধারী শিক্ষক কর্মচারীর
এমপি ফাইল এমপিও ভুক্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরন করেন। ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি জানতে পেরে জাল সনদধারী শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও বাতিল করে তদন্তের নির্দেশ দেন।
শিক্ষক কর্মচারীদের এমপিও ফাইল ঘেঁটে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ কেশবা ফাজিল মাদ্রাসায় জীববিঙ্গান বিষয়ের প্রভাষক হিসাবে মোঃ সামিউল বাশারকে যোগদান দেখানো হয়েছে ১/৪/২০১২ সালে কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা এমপিও ফাইল যাচাই করে মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন আলিম,ফাজিল শ্রেনিতে বিঙ্গান বিভাগের অনুমোদন নাই। পাবলিক পরীক্ষায় কেউ অংশ গ্রহন করেনি। তাছাড়া শিক্ষক কর্মচারীর তালিকায় তাঁর নাম নাই। অপর শিক্ষক ফরিদা পারভীন, আফিয়া খাতুন ও নৈশ প্রহরী মোশাররফ হোসেনের ক্ষেত্রে এমন মন্তব্য করেছেন। এ দিকে এবতেদায়ী জুনিয়র মৌলভী হিসাবে মোঃ আব্দুল ওয়াকিল যোগদান দেখানো হয় ১৬/৮/২০১০ সালে মন্তব্যের ঘরে লেখা নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র জাল ও ভুয়া।
চাঁদখানা বুড়িরহাট এ ইউ দাখিল মাদ্রাসায় তিনজনকে নিয়োগ দেখানো হলেও মোঃ আব্দুল জলিল নামে একজন নৈশ প্রহরীর জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী বয়স ৪২ বছর । অপর দিকে সহকারী শিক্ষক দীপ্তি রানীর নিয়োগের কাগজপত্র
জাল।
বড়ভিটা আফজাজুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসায় মোট ৫ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে প্রভাষক পদে মোঃ মোশরেউল আলম, সহকারী শিক্ষক ইংরেজি শবনম শারমিন, অফিস সহকারী মোঃ নুরন্নবী, এমএলএসএস পদে মোঃ মনারুল ইসলাম, আয়া পদে লায়লা আক্তার লুনাসহ সকলের সনদপত্র জাল ও নিয়োগ ভুয়া ও অবৈধ উল্লেখ করে মন্তব্যের ঘরে লেখা রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামন সরকারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ভেড়ভেড়ী কামাল উদ্দিনের একজন ও কালিকাপুর দাখিলের একজনের বিল পাঠিয়েছিলাম। কালিপুরের ওই শিক্ষকের বিল প্রদানের এক মাসের মধ্যেই আবার বন্ধ করে দিয়েছেন ইউএনও। কেন বন্ধ করলেন প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান। পুর্বের কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরও বিল ছাড়লেন কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার কাছে সঠিক মনে হয়েছে তাই দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পুর্বের তদন্ত প্রতিবেদন গোপন রেখে আমার স্বাক্ষর নিয়ে বিল উত্তোলনে সহায়তা করেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে ওই শিক্ষকের বিল বন্ধ করে দিয়েছি।
আপনার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, স্বাক্ষর জাল ও ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে বিল উত্তোলন প্রমানিত হলে যারা এসব ঘটনায় জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
কেশবা ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জ্যোতি বিকাশ চন্দ্রের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি অবগত ছিলামনা। আমি বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখব। যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
মোঃ শাহজাহান সিরাজ,কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)সংবাদদাতাঃ
কিশোরগঞ্জ,সোমবার ১০ মার্চ এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।