উপজেলার মাধবদী পৌরসভার ৬ নংওয়ার্ডের টাটাপাড়া মহল্লায় সরকারি খরচে নির্মিত ডঃরফিকুল ইসলাম খান হাসপাতালটি প্রাইভেট ও ব্যাবসায়ীভাবে রুপান্তর করার জন্য হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে সাইন ভোর্ট লাগিয়ে ছিল, এই সংবাদ পেয়ে হাসপাতালের জমি দাতা ডঃ রফিকুল ইসলাম খান নরসিংদী জেলা প্রসাষক সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন হাসপাতাল টি রক্ষা করার জন্য। খোজ নিয়ে জানা যায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রনালয় (LGRD), ২০০৬ সালে তাহাদের ২য় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার প্রকল্পের অধীনে নরসিংদী জেলার মাধবদী পৌরসভায় গরিব জনগনের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে নগর মাতৃসদন হিসাবে একটি সরকারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে টাটাপাড়া খান পরিবারের সন্তান ড. রফিকুল ইসলাম খানের মালিকানাধীন ১৭ শতাংশ জমি দান করে। উক্ত জমিটি মাধবদী পৌরসভার অধীনে টাটাপাড়া মৌজায় আর.এস ১১২ নং দাগের কর্নার প্লটটি ৮৯৪১/২০০৬ নং অর্পননামা দলিল মূলে দান করে। যাহাতে শর্ত থাকে যে, নির্মিতব্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি ‘ড. রফিকুল ইসলাম খান হাসপাতাল হিসেবে নাম করন হইবে এবং মাধবদী পৌরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ তাহাদের ম্যান্ডেটভুক্ত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম দিয়ে হাসপাতালটিকে পরিচালনা করিবে। বিদেশী অনুদান সহযোগে, বাংলাদেশ সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রনালয় ২০১২ সালে ‘ড. রফিকুল ইসলাম খান হাসপাতালটির নির্মান কাজ শেষ করে উহাকে পরিচালনার জন্য মাধবদী পৌরসভার নিকট হস্তান্তর করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হইল হস্তান্তরের পর হইতে মাধবদী পৌরসভা ইহাকে তাহাদের উপর ন্যাস্ত ম্যান্ডেট অনুযায়ী পরিচালনা করিতে সক্ষম হয় নাই। সরকারী খরচে নির্মিত ড. রফিকুল ইসলাম খান হাসপাতালটি ৬-তলা বিশিষ্ঠ আনুমানিক ৩০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস বিশিষ্ট, যাহাতে ৩০ জন রোগীর শয্যা সংকুলানের ব্যবস্থা রহিয়াছে। ইহাতে লিফট, অপারেশন থিয়েটার, ইনকুবেটর, প্রয়োজনীয় আধুনিক মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি, এ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার বসার রুম, অফিস রুম, অভ্যর্থনা রুম, সিকিউরিটি রুম, গাড়ী পার্কিং ব্যবস্থ্যা ইত্যাদি রয়েছে। মাধবদী পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন মনিক হাসপাতালটিকে সরকারী মেন্ডেট অনুযায়ী না চালিয়ে তাহার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে হাসপাতালটি ‘সূর্যের হাসি’ নামক প্রতিষ্ঠানের নিকট মাসিক ৪০,০০০/- টাকা ভাড়া নির্ধারন করিয়া অন্তত ৪ বৎসর যাবৎ ভাড়া আদায় করেছেন। তৎপর উক্ত সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন আরও বেপরোয়া হইয়া উঠেন এবং হাসপাতালটিকে সম্পূর্ন ভাবে প্রাইভেট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য বিগত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ‘মাধবদী ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতাল’ নামক অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের সাথে ১০ বৎসরের ভাড়ার চুক্তির ছদ্মনামে তাহার দুই ঘনিষ্ঠ জন এনামুল হক মনির (ওরফে ঈগল মনির) ও রাজিব আহমেদ এদের নিকট মাসিক ৫০,০০০/- টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়া হাসপাতালটি তাহাদের হাতে তুলে দেন। এলাকাবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম পৌরসভার উপর ন্যাস্ত মেন্ডেট অনুযায়ী গৃহীত হয় নাই বিধায় গরীব জনগন হাসপাতালটি হইতে স্বল্প খরচে কাংখিত স্বাস্থ্যসেবা পায় নাই। আরও দুঃখের বিষয় হইল যে, সাবেক পৌর মেয়র অন্যায়ভাবে, উক্ত দানকৃত ভূমিতে সরকারী অর্থায়নে নির্মিত হাসপাতালটিকে টাকার বিনিময়ে তাহার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিকট ভাড়া দিয়ে বেসরকারীকরন ও ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া চালু করার বিষয়টি স্পষ্টতই বেআইনি কাজ বিধায় এলাকাবাসী ইহা অতীতেও সমর্থন করে নাই এবং এখনও করে না। এলজিআরডি মন্ত্রনালয়, সাবেক মেয়রের বেসরকারীকরন কার্যক্রমের ব্যাপারে ১৭ই মে ২০২৩ সালে এক চিঠির মাধ্যমে বর্তমান হাসপাতালের স্থলে নাম পরিবর্তন করিয়া মাধবদী ডায়াবেটিক ও জেনারেল হাসপাতাল নামক বেসরকারী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য মেয়রকে নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে আবারো ১৫ই নভেম্বর ২০২৩ সালে এলজিআরডি মন্ত্রনালয় আরও একটি চিঠি মেয়র বরাবরে পাঠিয়ে জমি দানের শর্তানুসারে হাসপাতালের নামকরন অর্থাৎ ‘ড. রফিকুল ইসলাম খান হাসপাতাল’ করতে হবে এবং পৌরসভার স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম ব্যতিত অন্য কোন কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনাকে অবজ্ঞা ও লংঘন করিয়া তৎকালীন পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিক হাসপাতালটিকে ব্যবসায়িক বানানোর উদ্দেশ্যে ১৪ই আগষ্ট ২০২৩ সালে হাসপাতালটির নাম পরিবর্তন করিয়া ‘ড. রফিকুল ইসলাম খান নগর মাতৃ সদন ও মাধবদী ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল’ করেন। তাছাড়া, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাড়া দেওয়ার ব্যপারটি গোপন করে মেয়র তাহার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু এনামুল হক মনির ও রাজীব আহমেদ। যাদের কাছে হাসপাতালটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে তাদের নেতৃত্বে এবং তাদের দোসরদের সমন্বয়ে একটি হাসপাতাল পরিচালনা কমিটি গঠন করে, যাহা বিরোধিতার মুখে কার্যকরী হয় নাই। সাবেক মেয়রের এই চালাকিটা ছিল হাসপাতালটিকে ক্রমশ বেসরকারীকরন, বানিজ্যিকিকরণ সাবেক মেয়র মোশাররফ হোসেন মানিকের কালো পরিকল্পনা এলজিআরডি মন্ত্রনালয় নস্যাত করে দেয়। কিন্তু এখনও এনামুল হক মু
নির ও রাজিব আহমেদের কাছে হাসপাতালটির চাবি রহিয়াছে এবং তাহারা বর্তমান আইন শৃংখলা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়া, উক্ত সরকারী খরচে নির্মিত হাসপাতাল ভবনটিকে তাহাদের মালিকানায় প্রাইভেট হাসপাতাল হিসেবে চালু করার পায়তারা করিতেছে। উক্ত চক্রটি হাসপাতালটিকে প্রাইভেটে রূপান্তর করিতে পারিলে একটি মহতী উদ্যোগ ব্যর্থ হইবে; মন্দ কাজের নজির সৃষ্টি হইবে; ভাল কাজের জন্য দেশী ও বিদেশী দাতাগন উৎসাহ হারাইবে মর্মে নরসিংদী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা ড. রফিকুল ইসলাম খান হাসপাতাল’ খান অতি শীঘ্রই একটি পুরাপুরি সরকারী সাধারণ হাসপাতাল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করিবে এবং জনগনকে স্বল্প খরচে সঠিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করতে সক্ষম হইবে। উল্লেখ্য যে, নরসিংদী জেলার ভিতরে মাধবদী শহরটি সর্বাধিক শিল্প সমৃদ্ধ এবং জনবহুল এলাকা। অত্র এলাকায় সরকারী জেনারেল হাসপাতাল’ না থাকায় এলাকার জনগন স্বল্প খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা হইতে বঞ্চিত।
এবিষয়ে জানতে এনামুল হক মুনির ও রাজিব আহমেদ এর সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমরা যথাযথ নিয়ম মেনে মাধবদী পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে হাসপাতালটি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন রকম সংস্কার কাজ করছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছি। যে উদ্দেশ্য নিয়ে হাসপাতালটি নির্মিত হয়েছে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে চালু করতে পারলে পৌরসভা যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি এলাকাবাসী স্বল্প মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পাবে।
নজরুল ইসলাম নরসিংদী প্রতিনিধ
নরসিংদী,বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, এইচডি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম