মোহাম্মদপুর এলাকায় “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং পরিচালনাকারী চক্রের অন্যতম হোতাসহ ০৫ জন গ্রেফতার

Spread the love

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং পরিচালনাকারী চক্রের অন্যতম হোতা মোঃ জুলফিকার আলীসহ ০৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩; ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে আসছে। জঙ্গি, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, যুদ্ধাপরাধী, জাল নোট ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মানব পাচারকারী, প্রতারক, অপহরণকারী এবং বিভিন্ন মামলার মৃত্যুদন্ড ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার করে সাধারন জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় কতিপয় কিশোরগ্যাং সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন, এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এসকল সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ০৯/০২/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগরীর আদাবর থানাধীন মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং পরিচালনাকারী চক্রের অন্যতম হোতা ১। মোঃ জুলফিকার আলী (৩৭), পিতা-মোঃ আব্দুল আজিজ, সাং-নগর, থানা-মাদারগঞ্জ, জেলা-জামালপুর এবং তার সহযোগী ২। মোঃ হারুন অর রশিদ (৩৮), পিতা-মোঃ হায়দার, সাং-দোবাশিয়া, থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ, ৩। মোঃ শামছুদ্দিন বেপারী (৪৮), পিতা-মৃত শাহজালাল বেপারী, সাং-কানাইনগর, থানা-সদর, জেলা-ভোলা, ৪। কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮), পিতা-মৃত অমূল্য চন্দ্র দাস, সাং-কালিবাড়ি, থানা-গজারিয়া, জেলা-মুন্সিগঞ্জ ও ৫। মোঃ সুরুজ মিয়া (৩৯), পিতা-মৃত কাজী মিয়া, সাং-বাহাদুরপুর, থানা-গৌরিপুর, জেলা-ময়মনসিংহদের’কে ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ০১ টি ম্যাগাজিন, ০২ টি চাপাতি ও ০৭ টি ছুরিসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানায় যে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশকিছু কিশোরগ্যাং সক্রিয় রয়েছে। তন্মধ্যে ধৃত জুলফিকার তার নেতৃত্বে এবং ধৃত অপর আসামিদের সহযোগিতায় “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” নামে দুটি কিশোরগ্যাং পরিচালনা করত। এলাকার বেশকিছু বেপরোয়া ও মাদকসেবী কিশোরদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগ্যাং পরিচালনার মাধ্যমে এলাকায় অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি ও ভুমি দখল সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে। জুলফিকারের কিশোরগ্যাং পরিচালনা করার জন্য ধৃত হারুন, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এবং সুরুজ মিয়া সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। জুলফিকার মূলত “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” গ্রæপের কিশোরগ্যাংদের নিকট দেশী-বিদেশী পিস্তল ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র¿ সরবরাহ করে থাকে। ধৃত আসামিরা আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিশোরগ্যাংকে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের দ্বারা দলবদ্ধভাবে মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। এছাড়াও ধৃত আসামীদের নির্দেশে “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” দুটি কিশোরগ্যাং গ্রæপের সদস্যরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি ও বাস যাত্রীদেরকে টার্গেট করে যাত্রীদের ব্যাগ/পার্টস, মোবাইল ইত্যাদি ছিনতাই করে থাকে।

ধৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর জুড়ে তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” দুটি কিশোরগ্যাং এর তৎপরতায় প্রতিনিয়ত তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে বিরোধী অন্যান্য গ্যাংসমূহের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তো। খুবই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধৃত আসামিদের নির্দেশে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করত। এসব ঘটনায় তারা হরহামেশাই যে কাউকে গুলিবিদ্ধ, কুপিয়ে জখম, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করে না। এছাড়াও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর, তুরাগ হাউজিং, আক্কাস নগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড় ইত্যাদি এলাকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোরগ্যাং এর মহড়া পরিচালনা করতো। ধৃত আসামিদের তৎপরতায় কিশোরগ্যাং সদস্যরা এইসকল এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও ধৃত আসামিদের নির্দেশে কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা নিজেদেরকে প্রশাসনের লোক পরিচয় প্রদান করে সাধারণ পথচারীদের পথরোধের মাধ্যমে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় প্রদর্শন করে টাকা আদায় করতো। এর পাশাপাশি ধৃত আসামিরা বিভিন্ন ঠিকাদারের কাজ আটকিয়ে চাঁদা আদায়ের জন্য কিশোরগ্যাং সদস্যদেরকে বিদেশী পিস্তল দিয়ে ঠিকাদারের নিকট পাঠাত।

ধৃত জুলফিকার ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরবর্তীতে সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে। কিছুদিন ওয়ার্কশপে কাজ করার পর সে নারায়ণগঞ্জে এসে পিকআপে হেলপারি শুরু করে। হেলপারী করা অবস্থায় একটি স্বনামধন্য কোম্পানীর মালামাল আত্মসাৎ করার দায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে ০১ টি মামলা রুজু হয়। মামলাটি রুজু হওয়ার পরে সে পালিয়ে সৌদি চলে যায়। ২০২১ সালে দেশে আসার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে সে ০২ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। জেলে থাকা অবস্থায় ধৃত অপর আসামি হারুনের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। জুলফিকার জামিনে মুক্ত হয়ে হারুনের সাথে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চলে আসে এবং প্রথমে এই এলাকায় টিউবওয়েল এর মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। উক্ত সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমে ধৃত কৃষ্ণ, শামছুদ্দিন ও সুরুজসহ বেশকিছু মাদক সেবনকারী যুবকের সাথে তার ঘনিষ্টতা তৈরী হয়। তাদের সাথে পরামর্শ করে ধৃত জুলফিকার তাদেরকে নেতৃত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করে এবং তাদের নিয়ে ২০২২ সালে সে “ডায়মন্ড” নামের কিশোরগ্যাংটি তৈরী করে। সেই থেকে সে বাহিনীটি কে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য দিক নির্দেশনা ও অস্ত্র সরবরাহ প্রদান করতে শুরু করে। পরবর্তীতে সে আরও একটি কিশোরগ্যাং বাহিনী তৈরী করে সেটার নাম দেয় “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং বাহিনী। বাহিনী দুটিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে মোহাম্মদপুর এলাকায় সে বিভিন্ন অপকর্ম করতে থাকে।

ধৃত হারুণ ২০২১ সালে আদাবর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ০১ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে ধৃত জুলফিকার এর সাথে যোগসাজশে কিশোরগ্যাং পরিচালনা করতে শুরু করে। এছাড়াও ধৃত শামছুদ্দিন বেপারী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস পেশায় চা-বিক্রেতা এবং ধৃত সুরুজ মিয়া একজন প্রাইভেট কার চালক। তারা সকলেই মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বসবাস করে। এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমেই মূলত তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। তাদের দৃশ্যমান পেশার আড়ালে তারা কিশোরগ্যাং পরিচালনার কাজ করে থাকে। জুলফিকার তাদের কিশোরগ্যাং পরিচালনা চক্রটির অন্যতম হোতা। ধৃত আসামিদের দ্বারা পরিচালিত কিশোরগ্যাং সদস্যদের গ্রেফতারে র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান রয়েছে।

ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা,শনিবার ১০ ফেব্রুয়ারি এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ সংবাদ



» ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনের সীমা তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

» বিতর্ক সৃষ্টি হয় এরূপ কোন কর্মে হাত দেওয়া হবে না-ধর্ম উপদেষ্টা

» চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের শিপ ইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণ ও আগুনে ৬ জন দগ্ধ

» চলমান পোলিও টিকা কর্মসূচির মধ্যে গাজা ভূখণ্ডে বিমান হামলা অন্তত ২৭ জন নিহত

» গণভবন পরিদর্শন করেছেন তিনজন উপদেষ্টা

» জামালপুরে আদা চাষে গ্রামীন মহিলারা স্বাবলম্বি

» ধীরে ধীরে কমছে বন্যার পানি তবে এখনও দুর্ভোগ কমেনি দুর্গতদের

» সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

» সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ছেলে শিরহান শরিফ তমালকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

» ভারতের সিকিমে সড়ক দুর্ঘটনায় চার সেনা সদস্য নিহত

(সম্পাদক)
কাজী আবু তাহের মোহাম্মদ নাছির
নির্বাহী সম্পাদক,
আফতাব খন্দকার (রনি)

বার্তা সম্পাদক-খন্দকার সোহাগ হাছান
সহ বার্তা সম্পাদক-কামাল হোসেন খান
সহ বার্তা সম্পাদক-কাজী আতিকুর রহমান আতিক

আজ : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, খ্রিষ্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোহাম্মদপুর এলাকায় “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং পরিচালনাকারী চক্রের অন্যতম হোতাসহ ০৫ জন গ্রেফতার

Spread the love

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং পরিচালনাকারী চক্রের অন্যতম হোতা মোঃ জুলফিকার আলীসহ ০৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩; ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ম্যাগাজিন ও বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করে আসছে। জঙ্গি, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, যুদ্ধাপরাধী, জাল নোট ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মানব পাচারকারী, প্রতারক, অপহরণকারী এবং বিভিন্ন মামলার মৃত্যুদন্ড ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার করে সাধারন জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় কতিপয় কিশোরগ্যাং সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন, এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এসকল সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল ০৯/০২/২০২৩ তারিখ সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগরীর আদাবর থানাধীন মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে কিশোর গ্যাং পরিচালনাকারী চক্রের অন্যতম হোতা ১। মোঃ জুলফিকার আলী (৩৭), পিতা-মোঃ আব্দুল আজিজ, সাং-নগর, থানা-মাদারগঞ্জ, জেলা-জামালপুর এবং তার সহযোগী ২। মোঃ হারুন অর রশিদ (৩৮), পিতা-মোঃ হায়দার, সাং-দোবাশিয়া, থানা-গফরগাঁও, জেলা-ময়মনসিংহ, ৩। মোঃ শামছুদ্দিন বেপারী (৪৮), পিতা-মৃত শাহজালাল বেপারী, সাং-কানাইনগর, থানা-সদর, জেলা-ভোলা, ৪। কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮), পিতা-মৃত অমূল্য চন্দ্র দাস, সাং-কালিবাড়ি, থানা-গজারিয়া, জেলা-মুন্সিগঞ্জ ও ৫। মোঃ সুরুজ মিয়া (৩৯), পিতা-মৃত কাজী মিয়া, সাং-বাহাদুরপুর, থানা-গৌরিপুর, জেলা-ময়মনসিংহদের’কে ০১ টি বিদেশী পিস্তল, ০১ টি ম্যাগাজিন, ০২ টি চাপাতি ও ০৭ টি ছুরিসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা জানায় যে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশকিছু কিশোরগ্যাং সক্রিয় রয়েছে। তন্মধ্যে ধৃত জুলফিকার তার নেতৃত্বে এবং ধৃত অপর আসামিদের সহযোগিতায় “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” নামে দুটি কিশোরগ্যাং পরিচালনা করত। এলাকার বেশকিছু বেপরোয়া ও মাদকসেবী কিশোরদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগ্যাং পরিচালনার মাধ্যমে এলাকায় অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি ও ভুমি দখল সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে। জুলফিকারের কিশোরগ্যাং পরিচালনা করার জন্য ধৃত হারুন, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এবং সুরুজ মিয়া সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। জুলফিকার মূলত “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” গ্রæপের কিশোরগ্যাংদের নিকট দেশী-বিদেশী পিস্তল ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র¿ সরবরাহ করে থাকে। ধৃত আসামিরা আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিশোরগ্যাংকে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের দ্বারা দলবদ্ধভাবে মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। এছাড়াও ধৃত আসামীদের নির্দেশে “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” দুটি কিশোরগ্যাং গ্রæপের সদস্যরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি ও বাস যাত্রীদেরকে টার্গেট করে যাত্রীদের ব্যাগ/পার্টস, মোবাইল ইত্যাদি ছিনতাই করে থাকে।

ধৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর জুড়ে তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” দুটি কিশোরগ্যাং এর তৎপরতায় প্রতিনিয়ত তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে বিরোধী অন্যান্য গ্যাংসমূহের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তো। খুবই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধৃত আসামিদের নির্দেশে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করত। এসব ঘটনায় তারা হরহামেশাই যে কাউকে গুলিবিদ্ধ, কুপিয়ে জখম, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করে না। এছাড়াও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর, তুরাগ হাউজিং, আক্কাস নগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড় ইত্যাদি এলাকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোরগ্যাং এর মহড়া পরিচালনা করতো। ধৃত আসামিদের তৎপরতায় কিশোরগ্যাং সদস্যরা এইসকল এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও ধৃত আসামিদের নির্দেশে কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা নিজেদেরকে প্রশাসনের লোক পরিচয় প্রদান করে সাধারণ পথচারীদের পথরোধের মাধ্যমে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় প্রদর্শন করে টাকা আদায় করতো। এর পাশাপাশি ধৃত আসামিরা বিভিন্ন ঠিকাদারের কাজ আটকিয়ে চাঁদা আদায়ের জন্য কিশোরগ্যাং সদস্যদেরকে বিদেশী পিস্তল দিয়ে ঠিকাদারের নিকট পাঠাত।

ধৃত জুলফিকার ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরবর্তীতে সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে। কিছুদিন ওয়ার্কশপে কাজ করার পর সে নারায়ণগঞ্জে এসে পিকআপে হেলপারি শুরু করে। হেলপারী করা অবস্থায় একটি স্বনামধন্য কোম্পানীর মালামাল আত্মসাৎ করার দায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে ০১ টি মামলা রুজু হয়। মামলাটি রুজু হওয়ার পরে সে পালিয়ে সৌদি চলে যায়। ২০২১ সালে দেশে আসার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে সে ০২ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। জেলে থাকা অবস্থায় ধৃত অপর আসামি হারুনের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। জুলফিকার জামিনে মুক্ত হয়ে হারুনের সাথে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চলে আসে এবং প্রথমে এই এলাকায় টিউবওয়েল এর মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। উক্ত সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমে ধৃত কৃষ্ণ, শামছুদ্দিন ও সুরুজসহ বেশকিছু মাদক সেবনকারী যুবকের সাথে তার ঘনিষ্টতা তৈরী হয়। তাদের সাথে পরামর্শ করে ধৃত জুলফিকার তাদেরকে নেতৃত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করে এবং তাদের নিয়ে ২০২২ সালে সে “ডায়মন্ড” নামের কিশোরগ্যাংটি তৈরী করে। সেই থেকে সে বাহিনীটি কে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য দিক নির্দেশনা ও অস্ত্র সরবরাহ প্রদান করতে শুরু করে। পরবর্তীতে সে আরও একটি কিশোরগ্যাং বাহিনী তৈরী করে সেটার নাম দেয় “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং বাহিনী। বাহিনী দুটিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে মোহাম্মদপুর এলাকায় সে বিভিন্ন অপকর্ম করতে থাকে।

ধৃত হারুণ ২০২১ সালে আদাবর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ০১ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে ধৃত জুলফিকার এর সাথে যোগসাজশে কিশোরগ্যাং পরিচালনা করতে শুরু করে। এছাড়াও ধৃত শামছুদ্দিন বেপারী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস পেশায় চা-বিক্রেতা এবং ধৃত সুরুজ মিয়া একজন প্রাইভেট কার চালক। তারা সকলেই মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বসবাস করে। এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমেই মূলত তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। তাদের দৃশ্যমান পেশার আড়ালে তারা কিশোরগ্যাং পরিচালনার কাজ করে থাকে। জুলফিকার তাদের কিশোরগ্যাং পরিচালনা চক্রটির অন্যতম হোতা। ধৃত আসামিদের দ্বারা পরিচালিত কিশোরগ্যাং সদস্যদের গ্রেফতারে র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান রয়েছে।

ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা,শনিবার ১০ ফেব্রুয়ারি এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ সংবাদ



সর্বাধিক পঠিত



About Us | Privacy Policy | Terms & Conditions | Contact Us

(সম্পাদক)
কাজী আবু তাহের মোহাম্মদ নাছির
নির্বাহী সম্পাদক,
আফতাব খন্দকার (রনি)

বার্তা সম্পাদক-খন্দকার সোহাগ হাছান
সহ বার্তা সম্পাদক-কামাল হোসেন খান
সহ বার্তা সম্পাদক-কাজী আতিকুর রহমান আতিক

প্রধান কার্যালয়: গ-১০৩/২ মধ্যবাড্ডা প্রগতি স্বরণী বাড্ডা ঢাকা-১২১২|

Phone: +8801714043198, Email: hbnews24@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © HBnews24.com