জামালপুরে পরকীয়ার জেরে আব্দুল করিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩

বহুল আলোচিত জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানাধীন এলাকায় পরকীয়ার জেরে আব্দুল করিম হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীকে টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩।

র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‌্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। এছাড়াও বিভিন্ন হত্যাকান্ডের দীর্ঘদিন যাবৎ আত্মগোপনে থাকা বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনপূর্বক হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে র‌্যাব সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

উল্লেখ্য, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানাধীন দক্ষিন গজারিয়া এলাকায় ভিকটিম আব্দুল করিম এর ছোট বোন নুরে জান্নাত@ইতি কে একই গ্রামের এক প্রবাসী সুরুজ্জামানের সাথে বিয়ে দেয়। স্বামী সুরুজ্জামান বিয়ের কিছুদিন পরে সৌদি আরবে চলে যাওয়ায় ইতি ও তার দেবর তারা মিয়া অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ভিকটিম আব্দুল করিম তার বোন ইতি ও বোনের দেবর তারা মিয়ার অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারায় সে তার বোন ও তারা মিয়াকে কঠোরভাবে শাসন করে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি তার বোনের স্বামী সুরুজ্জামানকে ফোনের মাধ্যমে জানায়। ভিকটিম করিম তার বোনের স্বামীকে বিষয়টি জানানোর কারনে করিমের উপর তার বোন ও তারা মিয়ার কাছে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ভিকটিম করিম জামালপুর সদরে মেটাডোর কোম্পানীতে চাকুরী করতো। সে মোটরসাইকেল যোগে তার কর্মস্থল জামালপুর সদরে যাওয়া আসা করতো। গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখ বেলা ১২ টার দিকে করিম বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে জামালপুর নিজ কর্মস্থলে গমন করে। কিছুক্ষন পরে তারা মিয়া ভিকটিম করিমের বাড়িতে এসে তার স্ত্রীর কাছে করিমের খোজ জানতে চায়। তখন ভিকটিমের স্ত্রী জানায় করিম জামালপুর গিয়েছে। তারা মিয়া তখন করিমের স্ত্রীর কথা শুনে সেখান থেকে চলে যায়। বিকালে করিমের স্ত্রী তার স্বামীকে ফোন করে তার অবস্থান জানতে চায়। করিম জানায় সে তারা মিয়ার সাথে আছে এবং সে তারা মিয়ার সাথে তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে যাবে সেজন্য বাড়ি ফিরতে দেরী হবে। রাত ২টা বেজে গেলেও করিম বাড়িতে না ফেরায় তার স্ত্রী পুনরায় ফোন করলে ভিকটিম জানায় সে তারা মিয়ার সাথে আছে এবং রাতে আসতে না পারলেও সকালে ফিরে আসবে। এরপর করিমের স্ত্রী তার ফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পায়। সে করিমের ফোন বন্ধ পেয়ে তারা মিয়াকে ফোন দেয়। তখন তারা মিয়া ফোন ধরে জানায় করিমের কোন সন্ধান জানেনা এবং তাকে যেন আর ফোন না করে। তারপর থেকে করিমের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ৩০ আগস্ট ২০২৩ তারিখ মাদারগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণ গজারিয়া দউপাড় ব্রীজের নিচে সাইদ আলীর বসত ভিটার পাশে ডোবার পানিতে স্থানীয় লোকজন একটি লাশের সন্ধান পায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশের সুরতহাল করে ময়না তদন্ত শেষে করিমের লাশ তার পরিবারকে হস্তান্তর করে।

করিমের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তারা মিয়া এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে তারা মিয়ার বড় ভাই সুলতান ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য করিমের পরিবারের লোকজনের সাথে আপোষের চেষ্টা চালায়। সুলতান তাদের আত্মীয়তার দোহায় দিয়ে ঘটনাটি মামলা মোকদ্দমা না করার জন্য অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু সুলতানের কোন কথায় কান না দিয়ে করিমের স্ত্রী গত ২৩ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানায় বাদী হয়ে ধৃত তারা মিয়া, ভিকটিমের বোন নুরে জান্নাত@ইতি এবং তারা মিয়ার বড় ভাই সুলতানকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার পর সুলতান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয় ও অপর আসামী নুরে জান্নাত@ইতি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে র‍্যাব-৩ উক্ত হত্যাকান্ডের পলাতক আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল ০৫/০২/২০২৪ তারিখ দিবাগত রাতে টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের মূলপরিকল্পনাকারী ১। তারা মিয়া (৪০), পিতা-মৃত আনার মেম্বার, সাং-গজারিয়া, থানা-মাদারগঞ্জ, জেলা-জামালপুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃত আসামী প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদ জানায় যে, ভিকটিম করিমের বোন ইতি তারা মিয়ার ভাই সুরুজ্জামানের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে করিম ও তারা মিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কিছুদিন পরে সুরুজ্জামান বিদেশ চলে যায়। তার বিদেশ চলে যাওয়ায় এবং করিম ও তারা মিয়ার বন্ধুত্ব হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্রেফতারকৃত তারা মিয়া করিমের বাড়িতে আসা যাওয়ার মধ্যে এক পর্যায়ে ইতির সাথে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘটনার বছর দুয়েক আগে ইতি ও তারা মিয়াকে করিমের বাড়িতে শারীরিক সম্পর্কের সময় হাতে নাতে ধরে ফেলে। এতে করিম ক্ষিপ্ত হয়ে তারা মিয়াকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয়। হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা মিয়ার মনে করিমের প্রতি শত্রæতা তৈরী হয়। ফলে করিম ও তারা মিয়ার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক সেখানেই নষ্ট হয়। পরবর্তীতে করিম তারা মিয়ার এলাকায় বিয়ে করে। করিমের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার আসার সুবাদে তারা মিয়ার সাথে পুনরায় তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের মধ্যে পুনরায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠার ফলে করিম জানতে পারে তার বোনের সাথে তারা মিয়ার এখনো অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তাদের অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিকটিম আব্দুল করিম তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে যায়। সেখানে যাওয়ার পরে সে তার বোন ইতি এবং তারা মিয়াকে অবৈধ কাজে লিপ্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তৎক্ষনাৎ সে তার বোন ও তারা মিয়াকে কঠোরভাবে শাসন করে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি তার বোনের স্বামী সুরুজ্জামানকে ফোনের মাধ্যমে জানায়। ভিকটিম করিম তার বোনের স্বামীকে বিষয়টি জানানোর কারনে করিমের উপর তারা মিয়া ও ইতির ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষোভের জের ধরে তারা মিয়া ও ইতি করিমের উপর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করতে শুরু করে।

ধৃত আসামী আরও জানায় যে, পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ভিকটিম করিম জামালপুর থেকে বাড়ি ফেরার সময় তারা মিয়া দউপাড় ব্রীজের পাশে অপেক্ষা করতে থাকে। করিম উক্ত স্থানে আসার পর তারা মিয়া তাকে দাড় করিয়ে তারা মিয়া ও ইতির অবৈধ মেলামেশার বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় কথা কাটাকাটি চলতে থাকে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা মিয়া ও অজ্ঞাত চার জন মিলে ভিকটিম করিমের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তারা মিয়া ও অজ্ঞাত আসামিগণ ভিকটিম করিমকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর করিমের নিথর দেহটি ব্রীজের নিচে ডোবার পানিতে কচুরীপানার মধ্যে ফেলে দেয় এবং ভিকটিমের মোবাইল ফোন দূর্গম কোন স্থানে ফেলে দিয়ে তারা মিয়া পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মৃত দেহটি ফুলে পানির উপরে ভেসে ওঠায় স্থানীয় লোকজন দেখতে পায় এবং নিকস্থ থানায় খবর দেয়।

ধৃত তারা মিয়া পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে বিভিন্ন ক্ষেতে খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সে পারিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে। বিয়ের পরে তার ভাবি ইতির সাথে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি তার স্ত্রী জানতে পারায় তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। তারপর সে আর বিয়ে না করে তার ভাবি ইতির সাথে অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকে। ভিকটিম করিমকে হত্যার পর সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া এলাকায় অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আত্মগোপনে থাকাকালীন র‍্যাব-৩ কর্তৃক তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা,মঙ্গলবার ০৬ ফেব্রুয়ারি এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

Facebook Comments Box

সর্বশেষ আপডেট



» মাধবদীতে অগ্নি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কারনে হামলার শ্বীকার মেয়র মোশাররফ আগুনে পুড়ে ছাঁই পৌর ভাবন ও সোনালী টাওয়ার !

» বাংলাদেশকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে ভারত

» কলাপাড়া রিপোর্টার্স ক্লাব’র কমিটি গঠন সভাপতি মুক্তা, সম্পাদক রাসেল

» শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে দেশজুড়ে যে তাণ্ডব-হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার দায় বিএনপি ও জামায়াতের

» নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ৪৮১ জন কয়েদি আত্মসমর্পণ লুট করা ৪৫ অস্ত্র উদ্ধার

» আন্দোলন চলাকালে বিটিভিসহ বিভিন্ন স্থাপনায় যারা নাশকতা চালিয়েছে তাদের ধরতে জনগণের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

» শুক্রবার ও শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে কারফিউ শিথিল থাকবে।

» এইচএসসি ও সমমানের ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত

» মিরপুর ১০ নম্বর ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী

» না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন মাইলস-এর জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সুরকার ও গীতিকার শাফিন আহমেদ

 

প্রকাশক ও সম্পাদক: কাজী আবু তাহের মো. নাছির।

 

প্রধান নির্বাহী সম্পাদক: আফতাব খন্দকার (রনি)

 

বার্তা সম্পাদক: খন্দকার সোহাগ হাছান

সহ বার্তা সম্পাদক: কামাল হোসেন খান
সহ বার্তা সম্পাদক: কাজী আতিকুর রহমান আতিক (আবির)

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনপ্রাপ্ত নিউজপোর্টাল গভঃ রেজিঃ নং ১১৩

আজ শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জামালপুরে পরকীয়ার জেরে আব্দুল করিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩




বহুল আলোচিত জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানাধীন এলাকায় পরকীয়ার জেরে আব্দুল করিম হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারীকে টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩।

র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র‍্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র‌্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। এছাড়াও বিভিন্ন হত্যাকান্ডের দীর্ঘদিন যাবৎ আত্মগোপনে থাকা বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লু-লেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনপূর্বক হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে র‌্যাব সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

উল্লেখ্য, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানাধীন দক্ষিন গজারিয়া এলাকায় ভিকটিম আব্দুল করিম এর ছোট বোন নুরে জান্নাত@ইতি কে একই গ্রামের এক প্রবাসী সুরুজ্জামানের সাথে বিয়ে দেয়। স্বামী সুরুজ্জামান বিয়ের কিছুদিন পরে সৌদি আরবে চলে যাওয়ায় ইতি ও তার দেবর তারা মিয়া অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ভিকটিম আব্দুল করিম তার বোন ইতি ও বোনের দেবর তারা মিয়ার অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারায় সে তার বোন ও তারা মিয়াকে কঠোরভাবে শাসন করে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি তার বোনের স্বামী সুরুজ্জামানকে ফোনের মাধ্যমে জানায়। ভিকটিম করিম তার বোনের স্বামীকে বিষয়টি জানানোর কারনে করিমের উপর তার বোন ও তারা মিয়ার কাছে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ভিকটিম করিম জামালপুর সদরে মেটাডোর কোম্পানীতে চাকুরী করতো। সে মোটরসাইকেল যোগে তার কর্মস্থল জামালপুর সদরে যাওয়া আসা করতো। গত ২৮ আগস্ট ২০২৩ তারিখ বেলা ১২ টার দিকে করিম বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে জামালপুর নিজ কর্মস্থলে গমন করে। কিছুক্ষন পরে তারা মিয়া ভিকটিম করিমের বাড়িতে এসে তার স্ত্রীর কাছে করিমের খোজ জানতে চায়। তখন ভিকটিমের স্ত্রী জানায় করিম জামালপুর গিয়েছে। তারা মিয়া তখন করিমের স্ত্রীর কথা শুনে সেখান থেকে চলে যায়। বিকালে করিমের স্ত্রী তার স্বামীকে ফোন করে তার অবস্থান জানতে চায়। করিম জানায় সে তারা মিয়ার সাথে আছে এবং সে তারা মিয়ার সাথে তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে যাবে সেজন্য বাড়ি ফিরতে দেরী হবে। রাত ২টা বেজে গেলেও করিম বাড়িতে না ফেরায় তার স্ত্রী পুনরায় ফোন করলে ভিকটিম জানায় সে তারা মিয়ার সাথে আছে এবং রাতে আসতে না পারলেও সকালে ফিরে আসবে। এরপর করিমের স্ত্রী তার ফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পায়। সে করিমের ফোন বন্ধ পেয়ে তারা মিয়াকে ফোন দেয়। তখন তারা মিয়া ফোন ধরে জানায় করিমের কোন সন্ধান জানেনা এবং তাকে যেন আর ফোন না করে। তারপর থেকে করিমের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ৩০ আগস্ট ২০২৩ তারিখ মাদারগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণ গজারিয়া দউপাড় ব্রীজের নিচে সাইদ আলীর বসত ভিটার পাশে ডোবার পানিতে স্থানীয় লোকজন একটি লাশের সন্ধান পায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশের সুরতহাল করে ময়না তদন্ত শেষে করিমের লাশ তার পরিবারকে হস্তান্তর করে।

করিমের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তারা মিয়া এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে তারা মিয়ার বড় ভাই সুলতান ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য করিমের পরিবারের লোকজনের সাথে আপোষের চেষ্টা চালায়। সুলতান তাদের আত্মীয়তার দোহায় দিয়ে ঘটনাটি মামলা মোকদ্দমা না করার জন্য অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু সুলতানের কোন কথায় কান না দিয়ে করিমের স্ত্রী গত ২৩ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানায় বাদী হয়ে ধৃত তারা মিয়া, ভিকটিমের বোন নুরে জান্নাত@ইতি এবং তারা মিয়ার বড় ভাই সুলতানকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার পর সুলতান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয় ও অপর আসামী নুরে জান্নাত@ইতি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। পরবর্তীতে র‍্যাব-৩ উক্ত হত্যাকান্ডের পলাতক আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল ০৫/০২/২০২৪ তারিখ দিবাগত রাতে টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের মূলপরিকল্পনাকারী ১। তারা মিয়া (৪০), পিতা-মৃত আনার মেম্বার, সাং-গজারিয়া, থানা-মাদারগঞ্জ, জেলা-জামালপুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

গ্রেফতারকৃত আসামী প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদ জানায় যে, ভিকটিম করিমের বোন ইতি তারা মিয়ার ভাই সুরুজ্জামানের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে করিম ও তারা মিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কিছুদিন পরে সুরুজ্জামান বিদেশ চলে যায়। তার বিদেশ চলে যাওয়ায় এবং করিম ও তারা মিয়ার বন্ধুত্ব হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্রেফতারকৃত তারা মিয়া করিমের বাড়িতে আসা যাওয়ার মধ্যে এক পর্যায়ে ইতির সাথে অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঘটনার বছর দুয়েক আগে ইতি ও তারা মিয়াকে করিমের বাড়িতে শারীরিক সম্পর্কের সময় হাতে নাতে ধরে ফেলে। এতে করিম ক্ষিপ্ত হয়ে তারা মিয়াকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয়। হাত ভেঙ্গে যাওয়ায় তারা মিয়ার মনে করিমের প্রতি শত্রæতা তৈরী হয়। ফলে করিম ও তারা মিয়ার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক সেখানেই নষ্ট হয়। পরবর্তীতে করিম তারা মিয়ার এলাকায় বিয়ে করে। করিমের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার আসার সুবাদে তারা মিয়ার সাথে পুনরায় তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের মধ্যে পুনরায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠার ফলে করিম জানতে পারে তার বোনের সাথে তারা মিয়ার এখনো অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। তাদের অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিকটিম আব্দুল করিম তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে যায়। সেখানে যাওয়ার পরে সে তার বোন ইতি এবং তারা মিয়াকে অবৈধ কাজে লিপ্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তৎক্ষনাৎ সে তার বোন ও তারা মিয়াকে কঠোরভাবে শাসন করে এবং পরবর্তীতে বিষয়টি তার বোনের স্বামী সুরুজ্জামানকে ফোনের মাধ্যমে জানায়। ভিকটিম করিম তার বোনের স্বামীকে বিষয়টি জানানোর কারনে করিমের উপর তারা মিয়া ও ইতির ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষোভের জের ধরে তারা মিয়া ও ইতি করিমের উপর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করতে শুরু করে।

ধৃত আসামী আরও জানায় যে, পরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ভিকটিম করিম জামালপুর থেকে বাড়ি ফেরার সময় তারা মিয়া দউপাড় ব্রীজের পাশে অপেক্ষা করতে থাকে। করিম উক্ত স্থানে আসার পর তারা মিয়া তাকে দাড় করিয়ে তারা মিয়া ও ইতির অবৈধ মেলামেশার বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ সময় কথা কাটাকাটি চলতে থাকে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা মিয়া ও অজ্ঞাত চার জন মিলে ভিকটিম করিমের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তারা মিয়া ও অজ্ঞাত আসামিগণ ভিকটিম করিমকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর করিমের নিথর দেহটি ব্রীজের নিচে ডোবার পানিতে কচুরীপানার মধ্যে ফেলে দেয় এবং ভিকটিমের মোবাইল ফোন দূর্গম কোন স্থানে ফেলে দিয়ে তারা মিয়া পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মৃত দেহটি ফুলে পানির উপরে ভেসে ওঠায় স্থানীয় লোকজন দেখতে পায় এবং নিকস্থ থানায় খবর দেয়।

ধৃত তারা মিয়া পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে বিভিন্ন ক্ষেতে খামারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সে পারিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে। বিয়ের পরে তার ভাবি ইতির সাথে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি তার স্ত্রী জানতে পারায় তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। তারপর সে আর বিয়ে না করে তার ভাবি ইতির সাথে অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যেতে থাকে। ভিকটিম করিমকে হত্যার পর সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া এলাকায় অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আত্মগোপনে থাকাকালীন র‍্যাব-৩ কর্তৃক তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা,মঙ্গলবার ০৬ ফেব্রুয়ারি এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



 

প্রকাশক ও সম্পাদক: কাজী আবু তাহের মো. নাছির।

 

প্রধান নির্বাহী সম্পাদক: আফতাব খন্দকার (রনি)

 

বার্তা সম্পাদক: খন্দকার সোহাগ হাছান

সহ বার্তা সম্পাদক: কামাল হোসেন খান
সহ বার্তা সম্পাদক: কাজী আতিকুর রহমান আতিক (আবির)

প্রধান কার্যালয়: গ-১০৩/২ মধ্যবাড্ডা প্রগতি স্বরণী বাড্ডা ঢাকা-১২১২ | ব্রাঞ্চ অফিস: ২৪৭ পশ্চিম মনিপুর, ২য় তলা, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

Phone: +8801714043198, Email: hbnews24@gmail.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি । সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত © HBnews24.com