শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানা এলাকায় ইজিবাইক চালককে ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অন্যতম প্রধান আসামি ও মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ সহ তিনজনকে নারায়ণগঞ্জ সদর ও ঢাকার বনানী থানাধীন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, চুরি, কিশোর গ্যাং, ডাকাতি ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে। এছাড়াও বিভিন্ন হত্যাকান্ডের দীর্ঘদিন যাবৎ আত্মগোপনে থাকা বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনপূর্বক হত্যাকারীদেরকে গ্রেফতার করে দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে র্যাব সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানা এলাকায় ইজিবাইক চালককে ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার অন্যতম প্রধান আসামি ও মূল পরিকল্পনাকারী ১। আরিফ (২২), পিতা-ইমাম, সাং-চরভাগা পশ্চিম প্রধানিয়া কান্দি, থানা-সখিপুর, জেলা-শরিয়তপুর, ২। পারভেজ বেপারী (২৬), পিতা-আবুল বেপারী, সাং-ঘড়িসার চরমোহন, থানা-সখিপুর, জেলা-শরিয়তপুর, ৩। সজিব বেপারী (২২), পিতা-আবুল বেপারী, সাং-ঘড়িসার চরমোহন, থানা-সখিপুর, জেলা-শরিয়তপুরদেরকে ১৮/০১/২০২৪ তারিখ ২২০০ ঘটিকায় গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত আসামিরা জানায় যে, অটোরিকশা চালক হাবিবুর রহমান @ হাবু মাদবর এর সাথে ধৃত আরিফ এর টাকা পয়সার লেনদেন ছিল । তাদের মধ্যে দেনা পাওনা নিয়ে তর্ক বিতর্ক এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আরিফ হাবিবের উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। গ্রেফতারকৃত আরিফ তার বন্ধু নাহিদ সরদার, ধৃত পারভেজ বেপারী, সজিব বেপারী সহ তার আরও বেশ কয়েকজন সহযোগীর সাথে এ ব্যাপারে গোপনে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৩/১২/২০২৩ তারিখ সকাল ১১৩০ ঘটিকার সময় মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা একত্রিত হয়ে সুইচ গিয়ার, চাকু, চাপাতি সহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সখিপুর থানাধীন কাচিকাটা ইউনিয়নের ৮৯ নং হাজিয়াবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষা করে। ভিকটিম হাবিব অটোরিক্সায় যাত্রী নিয়ে নড়িয়া উপজেলার ঘড়িসার বাজার থেকে সখিপুর থানার চর দুলার চর এলাকায় যাওয়ার পথে অটোরিকশা থামিয়ে তার সাথে কথা কাটাকাটি শুরু করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভিকটিমের উপর তারা হামলা চালায়। হামলার মধ্যে নাহিদ সরদার তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে ভিকটিম হাবিবুর রহমানের মাথায় সজোরে কোপ দেয়। উক্ত সময় হাবিবুর রহমান মাথা সরিয়ে নিলে তার কাধেঁ চাপাতির কোপ লাগে। পরবর্তীতে ধৃত পারভেজ ও সজিব সহ অন্যান্য সহযোগীরা ভিকটিমকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে এবং ধৃত আরিফ হাবুর পেটের মধ্যে সুইচ গিয়ার দিয়ে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। আঘাতের ফলে ভিকটিম হাবু গুরুতর জখম প্রাপ্ত হয়ে অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে। তারপর ধৃত আসামিগণ সহ তাদের অন্যান্য সহযোগীরা পালিয়ে যায়। পালানোর সময় স্থানীয় জনতা নাহিদ সরদার কে আটক করে এবং এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করে। বিজ্ঞ আদালতের নিকট ধৃত নাহিদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে উক্ত ঘটনার নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে এবং এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আরিফ ও অন্যান্য আসামিদের ভ‚মিকাসহ তাদের নাম উল্লেখ করে।
স্থানীয় লোকজন ভিকটিম হাবুকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তৎক্ষনাৎ স্থানীয় একটি সরকারী হাসাপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের বড় ভাই জসিম মাদবর বাদী হয়ে ০৭ জনের নাম উল্লেখসহ ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলার অন্য তিন জন এজাহারনামীয় আসামি আশরাফুল দেওয়ান, মাহাবুব বেপারী ও ইউসুফ সহ অন্যান্য অজ্ঞাতনামা আসামিরা পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যহত রয়েছে।
ধৃত আরিফ সখিপুর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একজন সক্রিয় সদস্য এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সে মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালাতো, কখনো কখনো ট্রাকের হেলপারী করতো কিন্তু তার মূল কাজ ছিল কিশোর গ্যাং ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা। নিজে বেপরোয়া চলাফেরার পাশাপাশি এলাকায় কিশোরদের টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করাতো।
ধৃত পারভেজ এবং সজিব বেপারী আপন দুই ভাই। পারভেজ ৮ম শ্রেণী এবং সজিব ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তাদের মা একজন জর্ডান প্রবাসী এবং বাবার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। অল্প বয়সে বাবা-মা কে কাছে না পেয়ে পড়াশোনা না করে তারা এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে। তারা আরিফের নেতৃত্বে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলো। ধৃত আরিফ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত পারভেজ সকলকে ফোন করে একত্রিত করে এবং নিজে এই নির্মম হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
ঢাকা,শুক্রবার ১৯ ডিসেম্বর এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।