ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুটে গাজীপুরের শ্রীপুরে বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে নাশকতার মূল হোতা যুবদল নেতা ও তার সহযোগী এক ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শনির আখড়া কাঁচাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান।
গ্রেফতার হওয়া দুজন হলেন: ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান যুবদল নেতা মো. ইখতিয়ার রহমান কবির ও ঢাকার লালবাগ থানার ২৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদল সভাপতি মো. ইমন হোসেন। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে রেললাইন কাটার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, রেললাইনে নাশকতা সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি সঞ্চার ও ব্যাপক প্রাণনাশের পরিকল্পনা অনুযায়ী যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. ইখতিয়ার রহমান কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি কবিরকে বলেন, দলীয় উচ্চপর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে। এরপর মো. ইখতিয়ার রহমান কবির আজিমুদ্দিন কলেজের ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক তোহা ও গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরিকল্পনা অনুসারে তারা রেললাইন কাটার যাবতীয় সরঞ্জামাদি ঢাকার নবাবপুর মার্কেট থেকে ও গাজীপুর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কেনে।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ইমনের বাসা থেকে রেললাইন কাটার সরঞ্জামাদি গত ১২ ডিসেম্বর তোহা ও মাসুম গাজীপুরে নিয়ে যায়। একই দিন কবির ও ইমন কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রওনা দিয়ে জয়দেবপুর রেলস্টেশনে পৌঁছায়। সেখানে মাইক্রোবাস নিয়ে স্টেশনে অবস্থানরত তোহা ও মাসুম তাদের নিয়ে রেললাইন কাটার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
তিনি বলেন, পথে বিভিন্ন স্থান থেকে আরও বেশ কজনকে তারা মাইক্রোবাসে উঠায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বনখড়িয়া এলাকায় একটি বনের পাশে মাইক্রোবাস রেখে যাবতীয় সরঞ্জামাদিসহ হেঁটে তারা ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে দুজনকে পাহারায় রেখে অন্যদের সহায়তায় রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ইমন রেললাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। কাজ শেষে গ্যাস সিলিন্ডার দুটি ওখানেই ফেলে অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ তারা গাড়িতে ফিরে আসে। ঘটনার দুদিন পর কবির ফোন দিয়ে ইমনকে চকবাজার এলাকায় দেখা করে তাকে তিন হাজার টাকা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে বলে।
রেললাইন কাটা সফল হয়েছে বলে কবির নির্দেশদাতা টুকুকে জানিয়ে দেন। কবিরকেও বড় অঙ্কের টাকা পাঠান নির্দেশ দাতা।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার কবির এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন গত ২৮ অক্টোবর থেকে যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, নিউ মার্কেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০টিরও বেশি বাসে আগুন দিয়েছেন।
এই রেললাইন কাটার নির্দেশদাতা, পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও নাশকতার বেশ কয়েকটি ঘটনায় তার নাম এসেছে। এর আগে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় গান পাউডারসহ ছাত্রদল কর্মী গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদেও কবিরের নাম এসেছে। বিশেষ করে মহানগর দক্ষিণ এলাকায় যত নাশকতা ঘটেছে তার বেশিরভাগ ঘটনার মূল পরিকল্পনা ও নির্দেশদাতা হিসেবে জড়িত বলেও তথ্য রয়েছে বলে জানান আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ডেমরায় বাসে আগুনের ঘটনায় চালকের সহকারী নিহতের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে তাকে আমরা খুঁজছিলাম। সবগুলো ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কবিরকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডে আনা হবে।
ঢাকা,সোমবার ২৫ ডিসেম্বর এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।