নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ে কারসাজিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের রুখতে জনগণের সিন্ডিকেট গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।জনগণ সিন্ডিকেট করলে অন্য কোনো সিন্ডিকেট আর পাত্তা পাবে না বলেও জানান তিনি।শনিবার (২৫ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে আয়োজিত ভোক্তা অধিকার সচেতনতা বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বেসরকারী খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক ছায়া সংসদটি যৌথভাবে আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের একার পক্ষে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। এ জন্য জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। জনগণের ক্ষমতাই সবচেয়ে বড় ক্ষমতা। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণ যদি তাদের অধিকার সম্পর্কে জানে এবং সচেতন হয়, তাহলে অনেকটা সমস্যা লাঘব হয়ে যাবে।’জনগণ সিন্ডিকেট করলে অন্য কোনো সিন্ডিকেট আর পাত্তা পাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত রমজান মাসে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের আহ্বানে ব্যবসায়ীরা কর্ণপাত করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে উৎসবের সময় ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য কমান। এবারও রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি।
বাজার নিয়ন্ত্রণে বিদেশ থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়ার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যখন সরকারের আহ্বান সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নিলেন না, তখন বাধ্য হয়েই সরকারকে হস্তক্ষেপ নিতে হয়েছে। সরকার ডিম আমদানির অনুমতি দেয়ার পরপরই রাতারাতি বাজারে ডিমের দাম কমে এসেছে।
ভারতের পেঁয়াজ রফতানি নীতির কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ৭ থেকে ৮ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। এই পেঁয়াজ আমাদের আমদানি করতে হয়। আমরা যখন পেঁয়াজ আমদানি করতে চাইলাম, তখন কৃষকদের কথা বিবেচনা করে কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির বিরুদ্ধে মত দেয়। এরপর দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সময় আমরা যখন পেঁয়াজ আমদানি করতে চাইলাম, তখন ভারতে পেঁয়াজ আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ধার্য করে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের পেঁয়াজের দামে।
মূলত আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির প্রভাবে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বৈশ্বিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এখন আবার ফিলিস্তিন-হামাস যুদ্ধ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে সাড়ে তিন বছরই গেছে এসব ঝামেলাতে। তারপরও দ্রব্যমূল্য যেন জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সে চেষ্টা আমরা করছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯’ যে আছে, ভোক্তাকে সে বিষয়ে সচেতন করতে হবে। তার অংশ হিসেবেই আমাদের এই আয়োজন। মুক্ত বাজার অর্থনীতির কারণে বাজারে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া যায় না। বাজার বাজারের গতিতে থাকে। কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে বাজার অস্থির হয়। তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান।দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে বেসরকারি খাতের প্রভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশ চলছে বেসরকারি খাতের ওপর। দেশের অর্থনীতির ৮৩ শতাংশই বেসরকারি খাত থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কাউকে বাদ দিয়ে আমরা কাজ করতে পারবো না। ভোক্তা অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা প্রতিযোগিতা কমিশন এককভাবে কিছু করতে পারবে না। ব্যবসায়ী সমাজকে আমরা যতক্ষণ না পর্যন্ত যুক্ত করতে পারব, ততক্ষণ ফলাফল আসবে না।বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে গত ৮ আগস্ট এই ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার শুরু হয়। বেশ কয়েকটি ধাপে প্রতিযোগিতা শেষে ফাইনালে মুখোমুখি হয় ইডেন মহিলা কলেজ ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা।
শনিবারের ছায়া সংসদে সরকারি দলের ভূমিকা পালনকারী ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বিরোধী দলের ভূমিকা পালনকারী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দল ও রানার্স আপ দলের হাতে ট্রফি ও সনদসহ অর্থ পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন দল ২ লাখ টাকা ও রানার্স আপ দল ১ লাখ টাকা পুরস্কার পান। এছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে উভয় দলকে ৫ হাজার টাকা করে পুরস্কৃত করেন।
ঢাকা,শনিবার ২৫ নভেম্বর এইচ বি নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।